ইসি সচিব ও সরকারি কর্মকর্তাদের আড়াই ঘণ্টা গোপন বৈঠক

নৌকার প্রার্থীদের বিজয়ী করতে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের প্রতিনিয়ত গোপন বৈঠক চলছে। প্রশাসন এবং পুলিশের বিতর্কিত ও দলবাজ কর্মকর্তারা জনসমর্থনহীন আওয়ামী লীগকে ফের ক্ষমতায় বসানোর জন্য নানা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছেন রিজভী।

আজ শনিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। রিজভী অভিযোগ করেন, গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের চার তলার পিছনের কনফারেন্স রুমে এক গোপন মিটিং অনুষ্ঠিত হয়।

গোপন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সচিব সাজ্জাদুল হাসান, জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহমদ, নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, পানিসম্পদ সচিব (শেখ হাসিনার অফিসের প্রাক্তন ডিজি) কবির বিন আনোয়ার, বেসামরিক বিমান পরিবহন সচিব মহিবুল হক, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও মহানগরী রিটার্নিং অফিসার) সদস্য সচিব আলী আজম, প্রধানমন্ত্রীর এপিএস-১ (বিচারক কাজী গোলাম রসুলের মেয়ে) কাজী নিশাত রসুল। এছাড়াও পুলিশের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন র‌্যাব, ডিএমপি ও কাউন্টার টেররিজমের কর্মকর্তারা।

রাত সাড়ে ৭টা থেকে আড়াই ঘন্টা ধরে চলা এ মিটিংয়ে সারাদেশের ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং সেট-আপ ও প্ল্যান রিভিউ করা হয়। ডিআইজি হাবিব জানায়, পুলিশ সূত্রের খবর অনুযায়ী ৩৩টি সিট নৌকার কনফার্ম আছে এবং ৬০-৬৫ টিতে কনটেস্ট হবে, বাকী আর কোনো সম্ভাবনা নেই। কাজেই সাংঘাতিক কিছু করা ছাড়া এটি উৎরানো যাবে না।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, বিস্তারিত আলোচনা শেষে মূল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে বিএনপি-ফ্রন্টকে চরম অসহযোগিতা করা হবে, যতই চাপ দেয়া হোক প্রশাসনে হাত দেয়া যাবেনা, ধরপাকড় বাড়ানো হবে, প্রার্থী গুম খুন করে এমন অবস্থা তৈরী করা হবে যাতে তারা নির্বাচন থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়। সেটির আলামত ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে যশোর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আবু বকর আবুকে তুলে নিয়ে হত্যা করে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে।

তিনি বলেন, বৈঠকে আরো বলা হয়- জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যদি শেষ পর্যন্ত ভোটে থেকে যায় তাহলে ভোটের দিন পর্যন্ত ধরপাকড়ের তান্ডব চালানো হবে নির্দয়ভাবে, যেনো ভোট কেন্দ্রে কেউ হাজির হতে সাহস না করে। আর যদি ধানের শীষের অনুকূলে ভোটের হাওয়া ঠেকানো না যায়, তবে মিডিয়া ক্যু করে নৌকাকে জিতানো হবে, বিটিভির মাধ্যমে ফলাফল ঘোষণা করে সব মিডিয়াতে তা রিলে করার ব্যবস্থা করা হবে। একবার ফল ঘোষণা করতে পারলে তারপরে নির্মমভাবে সব ঠান্ডা করা হবে। এরপর থেকে এ ধরণের সভা খুব বেশি করা যাবেনা, তবে কনসালটেশন করে কাজ করা হবে।

তিনি বলেন, এছাড়াও উন্নয়ন প্রকল্প তদারকির নামে একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষে ৮ জন আওয়ামী দলীয় কর্মকর্তা দিয়ে মনিটরিং সেল গঠন করে পুলিশ সদর দফতর। বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান ৪৫ জন সিনিয়র কর্মকর্তাকে ৬৪ জেলার উপদেষ্টা (মেনটর) নিয়োগ করে একটি নজিরবিহীন সরকারি আদেশ জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ নিয়ে বিএনপির লিখিত আপত্তির প্রেক্ষিতে তা বাতিল করতে বাধ্য হয়। কিন্তু গোপনে ওইসব কর্মকর্তারা জেলায় জেলায় মনিটরিংয়ের কাজ এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন। এর বাইরে সারাদেশের ভোট ইঞ্জিনিয়ারিং করার লক্ষ্যে শেখ হাসিনা প্রথম তালিকার ৬ জন সচিবকে নিয়ে একটি গুপ্ত কমিটি গঠন করেছেন। সেই কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা অফিসার্স ক্লাবে। মূলতঃ এখানে সব ধরনের অফিসারদের গমনাগমণ ঘটে থাকে, তাই বিরোধী পক্ষের চোখ এড়ানো সহজ হবে মনে করে অফিসার্স ক্লাবে গুরুত্বপূর্ণ এই সভাটি বসে।

রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীনরা আসন্ন ভোট নিয়ে ভয়ঙ্কর পরিকল্পনায় মেতে উঠেছে। উপরোক্ত দলবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও কর্মকান্ড সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচন কমিশনকে লিখিত আকারে জানানো হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে সরকারের এজেন্ডা নির্বাচন কমিশন কখনো প্রকাশ্যে কখনো নীরবে-নিভৃতে বাস্তবায়ন করছে- এই অভিযোগ এখন সর্বত্র ভুরিভুরি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিরসন করতে সক্ষম হয়নি। মোদ্দাকথা তফসিল ঘোষণার পরও আওয়ামী প্রশাসনিক দাপটের ছবিটা মোটেও বদলায়নি। কিন্তু কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বে কতিপয় কমিশনার তাদেরকে স্বপদে বহাল রাখতে তৎপর। নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে কাজ করছে বলেই এই অভিযোগগুলো থেকে ছিটকে আসা কাদা তারা ঠেকাতে পারে না। বিতর্কিত নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নির্বাচনী কর্মকান্ড থেকে সরাতে হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে তাদেরকে প্রত্যাহার করতে হবে।

সূত্র: নয়া দিগন্ত